সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জানা গেছে তদন্তে নেমে চোখ কপালে উঠলো সিআইডির।
সিআইডি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে তার ব্যক্তিগত স্টাফ (পিয়ন) ছিলেন জাহাঙ্গীর। যার কাজ ছিল সুধা সদনে খাওয়ার পানি পরিবেশন করা। এ কারণে তার নাম হয় পানি জাহাঙ্গীর। পরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে জাহাঙ্গীর নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দেয়া শুরু করেন। এ পরিচয় ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের পদ, চাকুরি, নিয়োগ ও বদলি-বাণিজ্য করেন জাহাঙ্গীর।
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ নিয়ে গড়েছেন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ৪০০ কোটি টাকার মালিকসহ গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রী-নেতার বিরুদ্ধে উঠছে নানা দুর্নীতির অভিযোগ। মামলাও হয়েছে বেশ কয়েকটি। এমনকি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।
গত জুলাই মাসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের বাসার সাবেক এক কর্মীর অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে এনে সেদিন বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর নোয়াখালী-১ আসন (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তিনি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের বাসিন্দা।
সিআইডি সূত্র আরো জানায়, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামরুন নাহার বিপুল সম্পত্তির মালিক। তার রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। যার মধ্যে ধানমন্ডিতে ২ হাজার ৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ১টি গাড়ি, বিভিন্ন ব্যবসায় ৭৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ। তার ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের নিজের নামে তার এলাকায় ৪ কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষি জমি; রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দু’টি দোকান; মিরপুরে সাততলা ভবন ও দু’টি ফ্ল্যাট; গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে চারতলা বাড়ি রয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুর এলাকায় তার পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি রয়েছে; যার ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়া দেয়া আছে।
সিআইডি বলছে, এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ যে সোজা পথে হয়নি সেটার তথ্য পেয়েছে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে জাহাঙ্গীরের নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ডিপিএস, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা; তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা, ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অংশীদারি ফার্মে ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বিনিয়োগ আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক ও হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে সিআইডি।